
ব্রিটেনের নজরদারি নীতি অ্যাপলকে এনক্রিপশন ত্যাগে বাধ্য করছে
ডিজিটাল বিশ্ব আবারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও রাষ্ট্রীয় নজরদারির মধ্যে এক মৌলিক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি— এবং এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্য সেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। বিষয়টির কেন্দ্রে রয়েছে সরকারের চাপের মুখে ব্রিটিশ iCloud ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপলের প্রান্ত-প্রান্ত (end-to-end) এনক্রিপশন তুলে নেওয়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।
একজন জন্মসূত্রে ব্রিটিশ হলেও বর্তমানে দুবাইয়ে থাকা নাগরিক হিসেবে আমি এই ঘটনার প্রতি প্রবল সমালোচনাপূর্ণ দৃষ্টি দিই। আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত না করলেও, রাষ্ট্রনির্ধারিত “ব্যাকডোর” আমি মৌলিকভাবে সমস্যাজনক ও বিপজ্জনক বলে মনে করি।
মেটা: যুক্তরাজ্য অ্যাপলকে iCloud-এর প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপশন ত্যাগে বাধ্য করছে — গোপনীয়তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য বিশ্বব্যাপী এক মোড়লগ্ন মুহূর্ত।
সিদ্ধান্তের পটভূমি — ব্রিটিশ আইনের চাপ
২০২৫-এর ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপল ঘোষণা করে যে তারা তাদের Advanced Data Protection (ADP)— অর্থাৎ iCloud-এর প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপশন— যুক্তরাজ্যে আর চালু রাখবে না। এর নেপথ্যে রয়েছে তথাকথিত “ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ার্স অ্যাক্ট” (IPA) বা “স্নুপার্স’ চার্টার”-এর অধীনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা (রয়টার্স প্রতিবেদন)।
এই নির্দেশ অ্যাপলকে হয় একটি কারিগরি ব্যাকডোর তৈরি করতে, নয়তো— যা তারা শেষ পর্যন্ত করেছে— ADP-ই পুরোপুরি বন্ধ করতে বাধ্য করেছে। অ্যাপল দ্বিতীয় পথ বেছে নেয় যাতে তাদের সার্বিক সিস্টেম-সুরক্ষা ক্ষুণ্ন না হয়।
এর ফলশ্রুতিতে যুক্তরাজ্যের iCloud-ব্যাকআপ আর উচ্চ-স্তরের সুরক্ষায় সুরক্ষিত নয়; ব্যবহারকারীর ডেটা নীতিগতভাবে অধিক সহজে প্রবেশযোগ্য হয়ে পড়েছে।
প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপশন কীভাবে কাজ করে?
প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপশন নিশ্চিত করে যে ডেটা পরিবহন বা সংরক্ষণ-কালেই কেবল সংশ্লিষ্ট প্রেরক-গ্রাহক তা পড়তে পারবেন— সেবা-প্রদানকারী বা অন্য কোনও পক্ষ নয়।
সাধারণত দুটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী-এর মাধ্যমে এটি চালু হয়: প্রেরক পাবলিক কী দিয়ে বার্তাটি এনক্রিপ্ট করেন এবং শুধুমাত্র নির্ধারিত গ্রাহকের প্রাইভেট কী-ই তা ডিক্রিপ্ট করতে পারে। ফলে তথ্য যাত্রাপথে আটকানো হলেও উপযুক্ত কী ছাড়া তা পড়ে ফেলা অসম্ভব।
সরল কথায়, যদি iCloud-ডেটা প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপ্টেড থাকে, অ্যাপল পর্যন্ত তা পড়তে পারে না— সরকারি আদেশে হলেও না, কারণ ডিক্রিপ্ট করার চাবি অ্যাপলের কাছেই নেই। ডেটা-ফাঁস বা সার্ভার-হ্যাক হলেও এ ধরনের তথ্য আক্রমণকারীর কাছে অর্থহীন থাকে।
অ্যাপল কেন এনক্রিপশন শিথিল করল?
অ্যাপল এক সরকারি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কখনও তাদের কোনও পণ্য বা সেবায় “ব্যাকডোর” বা “মাস্টার-কী” যোগ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। তবু আইনি বাধ্যবাধকতায় তাদের যুক্তরাজ্যে iCloud-ব্যাকআপের উন্নত সুরক্ষা (ADP) বন্ধ করতে হয়েছে। তবে পাসওয়ার্ড ও হেলথ-ডেটা-র মতো অতি সংবেদনশীল বিষয়বস্তু আগের মতোই প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপ্টেড থাকবে— অ্যাপল পুরোপুরি নতি স্বীকার করেনি, বরং প্রযুক্তিগত অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক চাপের মাঝে আপস করেছে।
তবু মনে রাখা দরকার, অগণিত ব্যবহারকারী আদৌ Advanced Data Protection চালু করেননি; এটি OS-আপডেটের মাধ্যমে যুক্ত হলেও ডিফল্টে সক্রিয় নয়— আমি ও আমার মতো টেকি লোকেরা ছাড়া আর কে চালু করেছে?
Investigatory Powers Act (IPA): কোম্পানির ওপর রাজনৈতিক চাপ
এই পরিস্থিতি সরাসরি বিস্তৃত IPA-এর ফল, যা ব্রিটিশ সরকারকে গোপনে টেক-কোম্পানিগুলোর কাছে নির্দেশ পাঠানোর ক্ষমতা দেয়। অ্যাপলের ওপর চাপ শুধু ব্রিটিশ iCloud-অ্যাকাউন্টেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা বৈশ্বিক ব্যাকআপ-ডেটা-তেও প্রবেশাধিকার চাইছিল। এতে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া— বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে— দানা বাঁধে, যেখানে যুক্তি ওঠে যে বিষয়টি বিদ্মান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরিপন্থী।
বিপদ এখানে থামে না; Signal, WhatsApp বা Threema-র মতো অন্য এনক্রিপ্টেড সেবাগুলোকেও একই চাপের মুখে পড়তে হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ-কোটি ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা দুর্বল করবে।
যুক্তরাজ্যে অ্যাপলের পদক্ষেপ: কী বন্ধ হলো?
Advanced Data Protection-এ থাকলে আইফোন-ব্যাকআপ, ছবি, নোট ইত্যাদি এমনভাবে সুরক্ষিত যে অ্যাপলও সেগুলো পড়তে পারে না। সরকারের চাপে অ্যাপল যুক্তরাজ্যে এই অপশন নিষ্ক্রিয় করেছে; নতুন ব্যবহারকারীরা তা চালু করতে পারবেন না এবং পোরা ব্যবহারকারী-দেও বন্ধ করতে বলা হবে (Apple Support)। ফলে আইনগত আদেশে অ্যাপল আবারও ঐ ব্যাকআপ-ডেটা ডিক্রিপ্ট করে কর্তৃপক্ষকে দিতে পারবে।
কোন কোন ডেটা আর প্রান্ত-প্রান্ত সুরক্ষিত নয়?
অ্যাপল জানিয়েছে, নিম্নের ৯টি iCloud ডেটা-বিভাগ আর ADP-এর আওতায় নেই:
- iCloud Backup (ডিভাইস-ব্যাকআপ ও iMessage ইতিহাসসহ)
- iCloud Drive (ক্লাউড-দস্তাবেজ)
- Photos (iCloud Photo Library)
- Notes
- Reminders
- Safari Bookmarks
- Siri Shortcuts
- Voice Memos
- Wallet Passes ও Freeform-কন্টেন্ট
এগুলো এখন কেবল অ্যাপল-সার্ভারে এনক্রিপ্টেড, কিন্তু অ্যাপলেরই চাবি থাকে। iMessage ও FaceTime সরাসরি এনক্রিপ্টেড থাকলেও চ্যাট-বিকল্প যদি এমন ব্যাকআপে যুক্ত হয়, তবে অ্যাপল সেগুলো উন্মুক্ত করতে পারবে।
ব্যবহারকারীর জন্য এর মানে কী?
- আইনি আদেশে iCloud-ব্যাকআপ রাষ্ট্রীয় সংস্থার হাতে যেতে পারে।
- যে কেউ ADP-র ওপর ভরসা করেছিলেন, যুক্তরাজ্যে আর তা চালু রাখতে পারবেন না।
- iMessage চ্যাট-ও পরোক্ষভাবে আপস হতে পারে, কারণ ব্যাকআপে চাবি বা বার্তা-দু’টিই থাকতে পারে।
- এ উদাহরণ অন্য দেশগুলোকেও অনুরূপ দাবি তোলার সাহস জোগাতে পারে।
- যাঁরা ইতিমধ্যে ADP চালু করেছিলেন, তাঁদের টিকিয়ে রাখতে iCloud বন্ধ করে দিতে হতে পারে।
- ভবিষ্যতে অন্য বাজারেও কি অ্যাপল একই পথ নেবে— এ প্রশ্ন বৈশ্বিক ব্যবহারকারীর মনে জাগছে।
এখন কোন ডেটা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ?
বিশেষত iCloud Backup: এতে সমগ্র ডিভাইসের ছবি, কনট্যাক্ট, চ্যাট-লগ, অ্যাপ-ডেটা— সব থাকে। অতীতে ব্যাকআপ-এর মাধ্যমে iMessage-ও উদ্ধার-যোগ্য ছিল; ADP সে ছিদ্র বন্ধ করেছিল। এখন আবার এই ফাঁক রয়ে গেল। আদালতের আদেশে ব্যক্তিগত ছবি, নোট, ভয়েস-মেমো— সবই কর্তৃপক্ষের নাগালে।
আইটি-নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণে সমস্যা আরও গভীর: যে কোনও “ব্যাকডোর” সাইবার-অপরাধীও একদিন খুঁজে পাবে। Electronic Frontier Foundation-এর অ্যান্ড্রু ক্রকার মন্তব্য করেছেন, এ সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ গ্রাহককে “দুর্বৃত্তের হাতে পুতুল” বানায়। ডেটা-চুরি বা সার্ভার-ফাঁস হলে তথ্য এবার সটান-ই পাঠযোগ্য হবে— অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া: ট্রাম্প প্রশাসন
যুক্তরাজ্যের এই গোপন দাবি ওয়াশিংটনে বিপুল অসন্তোষ জাগিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে চীনা-ধাঁচের পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে সতর্ক করেছেন।
Investigatory Powers Act-এর অধীনে ফেব্রুয়ারির গোড়ায় অ্যাপল একটি গোপন নোটিস পায়; মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত তারা এর অস্তিত্ব স্বীকারও করতে পারেনি।
২০১৬-এর Apple-FBI মামলা
মার্কিন সরকারও অবশ্য একদা এনক্রিপশন ভাঙতে চাপ দিয়েছিল— স্যান বার্নারডিনো হামলার আইফোন 5c-এর ঘটনায়। সে সময় অ্যাপল কোনও ব্যাকডোর বানাতে অস্বীকার করে; শেষমেশ তৃতীয়-পক্ষের সাহায্যে FBI ডিভাইসটি আনলক করে।
হোয়াইট হাউস বৈঠকে প্রসঙ্গ
হোয়াইট হাউসে সাম্প্রতিক শীর্ষ বৈঠকে ট্রাম্প-স্টারমার আলোচনা করেছেন ইউক্রেন ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে; সেখানেই ট্রাম্প স্পষ্ট করেন যে আইক্লাউড-ব্যাকডোর মার্কিন চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। The Spectator-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের রক্ষণশীল মহলেও এই ইস্যু তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন পরখ করছে, যুক্তরাজ্য CLOUD Act Agreement লঙ্ঘন করেছে কি না— যা মার্কিন নাগরিকের ডেটা অনুমতি ছাড়া চাওয়া নিষিদ্ধ করে। DNI-এর পরিচালক টালসি গ্যাবার্ড আইনি বিশ্লেষক নিযুক্ত করেছেন; প্রাথমিক ধারণা, লঙ্ঘন ঘটেছে।
ব্যবহারকারীরা কী করতে পারেন?
- যুক্তরাজ্যে iCloud-ব্যাকআপ নিষ্ক্রিয় রেখে কেবল স্থানীয় ব্যাকআপ ব্যবহার করুন।
- ম্যাসেঞ্জার-চ্যাটের iCloud-ব্যাকআপ বন্ধ রাখুন, যাতে চ্যাট কেবল ডিভাইসে থাকে।
- ওপেন-সোর্স মেসেঞ্জার (যেমন Signal, Element) ব্যবহার করুন।
- যেসব পরিষেবা এখনো শক্তিশালী প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপশন সরবরাহ করে, সেগুলো বেছে নিন।
- বিকল্প ক্লাউড-পরিষেবা খুঁজে দেখুন, যেখানে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ কম।
- গণতান্ত্রিক দেশেও গোপনীয়তা-আইনের সপক্ষে জনমত গড়ে তুলুন।
- VPN ও নিরাপদ যোগাযোগ-প্রোটোকল ব্যবহার করুন— আইন যদিও মূলত সঞ্চিত ডেটা লক্ষ্য করে, যোগাযোগ শক্তপোক্ত হলে ক্ষতি নেই।
সর্বশেষ আপডেট (মার্চ ২০২৫)
গুগলকেও গোপন “Technical Capability Notice” (TCN) দেওয়ার সন্দেহ
- heise online (১৮ মার্চ ২০২৫) জানায়, অ্যাপলের মতো গুগলও সম্ভবত একটি TCN পেয়েছে। উভয় কোম্পানি মার্কিন সিনেটর রন উইডেনকে জানিয়েছে, তারা “না” বা “হ্যাঁ” কিছুই বলতে পারে না— গোপন আদেশেরই অন্যতম ইঙ্গিত।
- TCN কোম্পানিকে এমন প্রযুক্তি প্রস্তুত রাখতে বাধ্য করে, যাতে প্রয়োজনে এনক্রিপ্টেড কনটেন্টে প্রবেশ সম্ভব হয়। আদেশের অস্তিত্ব স্বীকার-নিষিদ্ধ।
অ্যাপলের আইনি লড়াই
- অ্যাপল Investigatory Powers Tribunal-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে, দাবি— এই ব্যাকডোর-চাপ “অগতিগত ও বিপজ্জনক”।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় চাপ
- সিনেটর রন উইডেন-সহ পাঁচ আইনপ্রণেতার খোলা চিঠি IPT-কে গোপনীয়তা শিথিলের আহ্বান জানায়, যাতে মার্কিন কোম্পানির সিকিউরিটি টিম নির্দেশ পরীক্ষা করতে পারে।
আদালতের অন্তর্বর্তী রায়
- ১৭ মার্চ ২০২৫-এর অন্তর্বর্তী সিদ্ধান্তে IPT বলেছে, Apple v. Home Office-এর অস্তিত্ব ও পক্ষগুলোর নাম প্রকাশিত থাকতে পারবে— যদিও বিস্তারিত এখনও গোপন। এটি স্বচ্ছতার ছোট বিজয়।
প্রভাব
- অ্যাপল যে “একজনেই টার্গেট” নয়, তা নিশ্চিত হলো।
- লড়াই আর পুরোপুরি গোপন নেই; অ্যাপল আদালতে আছে তা সবাই জানে।
- আগ্রহী জনতা এখন কমপক্ষে আংশিকভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারবে।
শেষ কথা
দৃষ্টান্তটি স্পষ্ট করেছে, এমনকি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোও টেক-কোম্পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ দিচ্ছে এনক্রিপশন দুর্বল করতে এবং ব্যক্তিগত ডেটা-তে ঢোকার সুযোগ বাড়াতে। অ্যাপল “নিকৃষ্টের মাঝে অপেক্ষাকৃত কম খারাপ” পথ বেছে নিয়েছে— ব্রিটিশ গ্রাহকের জন্য প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপশন বন্ধ করে। মূল সমস্যা কিন্তু অ্যাপলে নয়, বরং যুক্তরাজ্যের (এবং সম্ভাব্য আরও দেশের) রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে।
ব্যবহারকারীদের জন্য এই ঘটনা স্পষ্ট সতর্কবার্তা: ক্লাউড-ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপদ নয়। এনক্রিপশনই এখনো গোপনীয়তা রক্ষার অন্যতম কার্যকর পন্থা। একইসঙ্গে প্রশ্ন জাগছে, কত-কয়টি কোম্পানি ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চাপে ব্যাকডোর যোগ করেছে?
এটি নিঃসন্দেহে জটিল বিষয়, যেখানে গড় ব্যবহারকারী প্রায়ই প্রযুক্তিগত দিক থেকে অসহায়। আমিও জানি, আমি এক “টেক-বাবল”-এ বাস করি। তাই এই আলোচনা উন্মুক্ত ও বোধগম্য রাখা অপরিহার্য।
ব্রিটিশ iCloud-ব্যবহারকারীদের জন্য প্রান্ত-প্রান্ত এনক্রিপশন বন্ধ করে দেওয়া— এটি দেখিয়ে দিল, রাষ্ট্রীয় নজরদারি-চাহিদা ও ডিজিটাল গোপনীয়তা কীভাবে সংঘর্ষে জড়ায়। এনক্রিপশন দুর্বল হলে শুধু কর্তৃপক্ষই নয়, দুষ্ট-কামনাওয়ালারা সুরক্ষার ফাঁক খুঁজে পায়। ফলে বড় প্রশ্ন: একটি গণতন্ত্র কতখানি নজরদারি সহ্য করতে পারে, স্বাধীনতা বিসর্জন না দিয়েই?
ব্যবহারকারীরা তাই আরও সচেতন হোন, তথ্য সুরক্ষা জোরদার করুন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্তরে সক্রিয় থাকুন: তথ্য নিন, সচেতনতা গড়ুন এবং ডিজিটাল অধিকার রক্ষা করুন। ব্রিটিশ দৃষ্টান্ত মনে করিয়ে দেয়— গোপনীয়তা স্বয়ং-স্বাভাবিক নয়। নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়, বরং একটি গণতন্ত্রের মৌলিক দুটি স্তম্ভ— এই ভারসাম্য রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব।